Header Ads Widget

ভক্তরক্ষক ভগবান শ্রী শ্রী নৃসিংহ দেবের আর্বিভাব ও তার মাহাত্ম্য

ভক্তরক্ষক ভগবান শ্রী শ্রী নৃসিংহ দেবের আর্বিভাব ও তার মাহাত্ম্য।

ভক্ত রক্ষক ভগবান শ্রী শ্রী নৃসিংহ দেবের আর্বিভাব তিথী অনুষ্ঠান উদযা্পন করবেন, এবং সেদিন তার ভক্তরা গোধুলী পর্যন্ত উপবাস থেকে নৃসিংহ দেবের পূজা ও অভিষেক করবেন।
আসুন জেনে নেই ভক্তরক্ষক ভগবান শ্রী শ্রী নৃসিংহ দেবের আর্বিভাব ও তার মাহাত্ম্য।
নৃসিংহ (সংস্কৃত: नरसिंह, বানানান্তরে নরসিংহ) বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার। পুরাণ, উপনিষদ ও অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে তাঁর উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন মহাকাব্য, মূর্তিতত্ত্ব, মন্দির ও উৎসব ইত্যাদির তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর পূজা প্রচলিত রয়েছে। ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেবকে শৌর্যের মূর্তিস্বরূপ এবং তাঁর মন্ত্র শত্রুনিধন ও অমঙ্গল দূরীকরণে বিশেষ ফলপ্রসূ; অতীতে শাসক ও যোদ্ধারা ভগবান নৃসিংহ দেবের পূজা করতেন।
ভগবান নৃসিংহ দেব অর্ধ-মনুষ্য অর্ধ-সিংহ আকারবিশিষ্ট। তাঁর দেহ মনুষ্যাকার, কিন্তু সিংহের ন্যায় মস্তক ও নখরযুক্ত। মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী ভগবান নৃসিংহ দেব অষ্টভূজ হলেও, অগ্নিপুরাণ অনুযায়ী তিনি চতুর্ভূজ । একাধিক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তাঁর পূজা প্রচলিত। দক্ষিণ ভারতে ভগবান নৃসিংহ দেবের পূজার বিশেষ প্রচলন দেখা যায়। ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব ‘মহারক্ষক’; তিনি ভক্তকে তার প্রয়োজনের সময় সর্বদা রক্ষা করে থাকেন।
একাধিক পুরাণ গ্রন্থে ভগবান নৃসিংহ দেবের উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাণে নৃসিংহ দেব-সংক্রান্ত মূল উপাখ্যানটির সতেরোটি পাঠান্তর বর্তমান। ক’টি কাহিনি অন্যান্য কাহিনির চেয়ে একটু বিস্তারিত।
নৃসিংহ অবতারের বর্ণনা রয়েছে-
☛ ভাগবত পুরাণ (সপ্তম স্কন্দ),
☛ অগ্নিপুরাণ (৪।২-৩),
☛ ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ (২।৫।৩-২৯),
☛ বায়ুপুরাণ (৬৭।৬১-৬৬),
☛ হরিবংশ (৪১ এবং ৩।৪১-৪৭),
☛ ব্রহ্মাপুরাণ (২১৩।৪৪-৭৯),
☛ বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ (১।৫৪),
☛ কূর্মপুরাণ (১।১৫।১৮-৭২),
☛ মৎস্যপুরাণ (১৬১-১৬৩),
☛ পদ্মাপুরাণ (উত্তরখণ্ড, ৫।৪২),
☛ শিবপুরাণ (২।৪।৪৩ ও ৩।১০-১২),
☛ লিঙ্গপুরাণ (১।৯৫-৯৬),
☛ স্কন্দপুরাণ ৭ (২।১৮।৬০-১৩০) ও
☛ বিষ্ণুপুরাণ (১।১৬-২০) গ্রন্থে।
☛ মহাভারত-এও (৩।২৭২।৫৬-৬০) নৃসিংহ অবতারের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া একটি প্রাচীন বৈষ্ণব তাপনী উপনিষদ (নরসিংহ তাপনী উপনিষদ) তাঁর নামে উল্লিখিত হয়েছে।
ভগবান নৃসিংহ দেবের আবির্ভাব তিথি ।
ভগবান নৃসিংহ অবতার ভগবান বিষ্ণুর সবচাইতে ক্রোধীরূপী অবতার । পুরাণশাস্ত্র গুলোতে ভগবান বিষ্ণুর এই অবতারের বর্ণনা দেখা যায় । কশ্যপ মুনির দুই সন্তান হিরন্যক্ষ ও হিরণ্যকশিপু ছিলো অসুর। ভগবান বিষ্ণু বরাহ অবতার গ্রহণ করে হিরন্যক্ষ অসুরকে বধ করেন। এতে হিরণ্যকশিপু ভীষন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধের আশায় ব্রহ্মার তপস্যা করেন । প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে বর প্রাপ্ত করেন - কোনো অস্ত্র বা শস্ত্রে, কোনো জীব বা জন্তু বা মানব বা দেবতা, দিনে- না রাত্রে, ঘরের ভেতরে না ঘরের বাইরে, শূন্যে নাতো ভূমিতে, জলে নাতো স্থলে কোথাও যেনো না মৃত্যু হয়। ব্রহ্মার সৃষ্ট কোনো জীব যেনো বধ না করতে পারে।অপাত্রে উন্নত কিছু দিলে যেমন সে তার অপব্যবহার করে - ঠিক হিরণ্যকশিপু বর পেয়ে তাই করলো। নিজেকে নিজেই ভগবান ঘোষিত করে যাগ যজ্ঞ, দেবতাদের পূজা সকল বন্ধ করে দিলো। অসুরদের তাণ্ডব বাড়লো। হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদু দেবী, দেবর্ষি নারদের আশ্রমে এক সুন্দর দর্শন পুত্রের জন্ম দেন । সেই পুত্র বাল্যকাল থেকেই ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত ছিলো। মুখে সর্বদা হরিনাম করতো । নিজ পুত্রের মুখে পরম শত্রু বিষ্ণুর বন্দনাস্তব শুনে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে দৈত্যগুরু শুক্রের আশ্রমে আসুরিক বিদ্যা শেখবার জন্য পাঠালো । কিন্তু সেখানে অসুরাজের চেষ্টা বিফল হোলো। অল্পদিনের মধ্যে প্রহ্লাদ সকল অসুরবালক দের যারা আসুরিক বিদ্যা শিখতে এসেছিলো তাদের মধ্যে বিষ্ণু ভক্তির বীজ বপন করলো। ক্রুদ্ধ হয়ে হিরন্যকশিপু প্রহ্লাদ কে মৃত্যুদণ্ড দিতে বিষাক্ত সাপের মাঝে রেখে দিলো, মত্ত হস্তীর সামনে ফেলে দিলো, বিষ মেশানো ক্ষীর খাওয়ালো,পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দিলো তবুও ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদের কিছুই হোলো না। হিরন্যকশিপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে বসলো , হোলিকা বর পেয়েছিলো আগুনে তার ক্ষতি হবে না। কিন্তু অসৎ কাজে লিপ্তা হবার জন্য হোলিকা পুড়ে মরল। প্রহ্লাদ অক্ষত অবস্থায় চিতা থেকে নেমে এলো। হিরণ্যকশিপু তখন প্রহ্লাদ কে জিজ্ঞেস করলো- “তুই যে হরির নাম করিস সে থাকে কোথায়?” প্রহ্লাদ বলল- “তিনি সর্বত্র , সর্ব স্থানে বিরাজিত।” হিরন্যকশিপু একটি স্তম্ভ দেখিয়ে বলল- “এখানেও কি হরি আছেন?” প্রহ্লাদ বললেন- “অবশ্যই আছেন।”হিরন্যকশিপু সেই স্তম্ভ ভেঙ্গে দেখতে চাইলো যে তার মধ্যে হরি আছেননাকি । স্তম্ভ ভাঙ্গবার সাথে সাথে সেখান থেকে ভগবান হরি নৃসিংহ রূপ ধারন করে প্রকট হলেন। হিরন্যকশিপু ভগবান নৃসিংহ দেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হোলো। তখন নাতো দিন না রাত। সূর্য পুরোপুরি অস্তগামী হয় নি। ভগবান নৃসিংহ দেব চৌকাঠে বসে হিরন্যকশিপু কে কোলেনিলেন। এরপর নখ দিয়ে হিরন্যকশিপুর উদর ছিড়ে বধ করলেন। ব্রহ্মার বরঅনুযায়ী নৃসিংহ দেব অস্ত্র বা শস্ত্র প্রয়োগ করলেন না। নখ অস্ত্র বা শস্ত্র নয়। অসুর মাটিতেও না আকাশেও না নৃসিংহ দেবের কোলে ছিলো। তখন ছিলো না রাত না দিন, নৃসিংহ দেব ঘরের মধ্যে বা বাইরে নয়- চৌকাঠে,নৃসিংহ দেব নাতো পুরো দেবতা ছিলেন না পশু, তিনি ব্রহ্মার সৃষ্টিতে আসেন না। কারন ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি হয়েছে । এইভাবে অসুর বধ হোলো। ভক্তেরা এদিন ভগবান নৃসিংহ দেবের পূজা করেন।পরদিন বৈশাখী পূর্ণিমা । এইদিন ভগবান বিষ্ণু শান্ত অবতার বুদ্ধ রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ।
“শ্রী নরসিংহ ভগবানের দিব্য লীলা”
বৈশাখী শুক্লা চতুর্দশীর সন্ধ্যায় শ্রী হরির অবতার রূপে নর সিংহ ভগবান প্রকট হয়েছিলেন বহু লক্ষ বৎসর পূর্বে। কিন্তু এই কলি যুগেও তাঁর আবির্ভাব ও আশীর্বাদ থেকে ভক্তরা বঞ্চিত হন নি। তার ২ টি উদাহরন দিচ্ছি।
আজ থেকে সহস্রাধিক বৎসর পূর্বে ভগবৎ পাদ শঙ্কর আচার্য যখন দিগবিজয়ে বেরিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মের বিজয় পতাকা ভারতের নানা প্রান্তে উড্ডীন করছেন ,সেই সময় তিনি বেশ কয়েক বার বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। একবার দক্ষিণ ভারতের শ্রী শৈল ম তীর্থে শঙ্কর এক দুষ্ট কাপালিকের কবলে পড়েন। কাপালিক তাঁকে বলি দেয়ার চেষ্টায় ছিল। শঙ্কর তা বুঝেও নির্বিকার ভাবে ভগবৎ চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এইসময় সহসা শঙ্করের অন্যতম শিষ ও পদ্মপাদ সেখানে উগ্র মূর্তিতে প্রবেশ করেন ও গর্জন করতে করতে বলির খাঁড়া দিয়ে কাপালিক কে বধ করেন। পরে প্রক্রিতস্থ হলে তিনি শঙ্করকে জানান যে ছোট বেলা থেকেই পদ্মপাদ নর সিংহ ভক্ত। একবার প্রভু পদ্মপাদকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে ভয়ানক বিপদ কালে তিনি আবির্ভূত হয়ে তাঁকে রক্ষা করবেন। বাস্তবেও তাই হল। নর সিংহ ভগবান পদ্মপাদের শরীরে আবিষ্ট হয়ে দুষ্ট দমন করলেন। ভারত ও হিন্দু ধর্ম তার ফলে আচার্য শঙ্কর কে আরও অনেক দিন জীবিত ভাবে পেল এবং অগ্র গতির দিকে এইভাবে আর -ও এগিয়ে গেল।
সাম্প্রতিক অতীতে এ সি ভক্তি বেদান্ত দ্বারা “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সঙ্ঘ” বা ইস্কন স্থাপিত হবার পর যখন নানারকম প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছিল,বিশেষ করে যখন মায়াপুর মূল কেন্দ্রে বার বার ডাকাতের হামলা হচ্ছিল, সেই সময় ইস্কনের পরিচালক গন নর সিংহ ভগবানের উপাসনা করতে মনস্থ করেন। একবার এমনকি ডাকাতেরা প্রধান মন্দির বা চন্দ্রোদয় মন্দিরের বিখ্যাত রাধামাধবের বিগ্রহ কেড়ে নেবার-ও চেষ্টা করেছিল। যাই হোক, কাঞ্চীর বর্তমান শঙ্কর আচার্য পূজ্যপাদ জয়েন্দ্র সরস্বতীর পরামর্শ ক্রমে নর সিংহ ভগবান মায়া পুরে স্থাপিত হন ।এর পর থেকে ইস্কনের সঙ্কট দূর হতে থাকে ও আরও অগ্র গতি হতে থাকে ।



আরো জানুন