Header Ads Widget

কৃষ্ণকে অর্পন করুন

কৃষ্ণকে অর্পন করুন


ন্দ্রিয় দ্বারা যে কিছু কর্ম করি না কেন, সকলই শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করিয়া করিতে হইবে ‘কৃষ্ণার্পণ ’
যৎ করোষি যদশ্নাষি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ।
যৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণম।।
“হে কৌন্তেয়, তুমি যাহা কিছু কর, যাহা কিছু ভোজন কর, যাহা কিছু হোম কর, যাহা কিছু দান কর, যাহা কিছু তপস্যা কর, তাহা সমস্তই আমাকে অর্পণ করিও। শ্রীমদ্ভবদ্গীতাঃ- ৯/২৭।।
সর্বেন্দ্রিয় দ্বারা যে কিছু কর্ম করি না কেন, সকলই শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ
করিয়া করিতে হইবে।
শ্রীমদ্ভাগবতে ঠিক এই ভাবে বলা হইয়াছে-
“কায়, মন, বাক্য, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি, আত্মাদ্বারা বা স্বভাববশতঃ যে কোন কর্ম করা হয়, তাহা সমস্তই পরাৎপর নারায়ণে সমর্পণ করিবে। ভাগবতঃ-১১। ১। ৩৬ ।।
এস্থলে কেবল পুজার্চ্চনা, দান, তপস্যাদির কথা বলা হয় নাই, আহার- বিহারাদি সমস্ত লৌকিক কর্মও ঈশ্বরার্পণ-বুদ্ধিতে করিতে হইবে, ইহাই বলা হইতেছে। এই ঈশ্বরার্পণ-বুদ্ধি কিরূপ ? – ঈশ্বরের সঙ্গে সাধক যে ভাব স্থাপন করেন তদনুসারেই তাঁহার কর্মাপর্ণ-বুদ্ধি নিয়মিত হয়। ভক্তি মার্গের প্রথম সোপান হইতেছে দাস্যভাব। তুমি প্রভু, আমি দাস, তুমি যন্ত্রী, আমি যন্ত্র, তুমি কর্তা, আমি নিমিত্তমাত্র। এই ভাবটি গ্রহণ করিয়া সমস্ত কর্ম করিতে পারিলেই কর্ম ঈশ্বরে অর্পিত হয়। আমি আহার- পানাদি করি, সংসারকর্ম করি, যাহা কিছু করি তুমিই করাও, তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হউক, তোমার কর্ম সার্থক হউক, আমি আর কিছুই জানি না, চাহি না-
“ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি।”
এই অবস্থায় ‘আমি তোমার’ এই দাস্যভাবটি নিত্য বিদ্যমান থাকে। সুতরাং আমার যাহা কিছু কর্ম তোমার প্রীতি-সম্পাদানার্থ, এই অবস্থায় সাধকের অন্য কর্ম থাকে না। শ্রবণ-স্মরণ-কীর্তন, পুজার্চনা ইত্যাদি ভগবৎ-সেবা-বিষয়ক কর্মই তাহাঁরই কর্ম হইয়া উঠে। অধিকতর উচ্চাবস্থায়, ভগবান জগন্ময়, সর্বভূতে অধিষ্ঠিত, সুতরাং ভূত-সেবাই তাঁহার সেবা, এই জ্ঞান জন্মিলে নিষ্কামভাবে সাধক লোক-সেবায়ই নিযুক্ত হন। এই কর্মার্পণের মূলে কর্মফলের আশা ত্যাগ করিয়া কর্ম করিবার তত্ত্ব আছে। জীবনের সমস্ত কর্ম, এমন কি জীবনধারণ পর্যন্ত এইরূপ কৃষ্ণার্পণ-বুদ্ধিতে অথবা ফলাশা ত্যাগ করিতে পারিলে, পাপবাসনা কোথায় থাকিবে আর কু-কর্মই বা কিরূপে ঘটিবে ? কিংবা, লোকোপযোগার্থ কর্ম কর, লোকহিতার্থ আত্মসমর্পণ কর, এরূপ উপদেশেরও আর দরকার কেন হইবে ? তখন তো ‘আমি ও ‘লোক’ এই দুইয়েরই সমাবেশ পরমেশ্বর। এই দুইয়েরই পরমেশ্বরের সমাবেশ হওয়ায় স্বার্থ ও পরার্থ এই দুই-ই কৃষ্ণার্পণরূপ পরমার্থের মধ্যে নিমগ্ন হইয়া যায়। কৃষ্ণার্পণ বুদ্ধিতে সমস্ত কর্ম করিলে নিজের যোগক্ষেমও বাধা পড়ে না। স্বয়ং ভগবানই এই আশ্বাস দিয়াছেন।
“অনন্যচিত্ত হইয়া আমার চিন্তা করিতে করিতে যে ভক্তগণ আমার উপাসনা করেন, আমাতে নিত্যযুক্ত সেই সমস্ত ভক্তের যোগ ও ক্ষেম আমি বহন করিয়া থাকি (অর্থাৎ তাহাদের প্রয়োজনীয় অলদ্ধ বস্তুর সংস্থান এবং লদ্ধ বস্তুর রক্ষণ করিয়া থাকি)।।” ৯/২২।।
এইরূপ আরও বলিয়াছেন-
“এইরূপ সর্বকর্ম আমাতে সমর্পণ করিলে শুভাশুভ কর্ম-বন্ধন হইতে মুক্ত হইবে। আমাতে সর্বকর্ম সমর্পণ-রূপ যোগে যুক্ত হইয়া কর্মবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া আমাকেই
প্রাপ্ত হইবে।।” ৯/২৮।।
সংগ্রহঃ- গীতারহস্য, লোকমান্য তিলক। (তাৎপর্য সংগ্রহ)
হরে কৃষ্ণ। কৃষ্ণ কৃপাপ্রার্থী।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।



Join Us on Facebook