শ্রীল
প্রভুপাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
শ্রীল অভয়াচরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত
স্বামী প্রভুপাদ ১৮৯৬ সালে কলিকাতায় আবির্ভূত হয়েছিলেন । ১৯২২ সালে কলিকাতায় তিনি
তাঁর গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের সাাত লাভ করেন ।
শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন ভক্তিমার্গেরর বিদগ্ধ পণ্ডিত ও
৬৪টি গৌড়ীয় মঠের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি এই বুদ্ধিদীপ্ত,
তেজস্বী ও শিতি যুবকটিকে বৈদিক জ্ঞান প্রচারের কাজে জীবন উৎসর্গ
করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
শ্রীল প্রভুপাদ এগার বছর ধরে তার
আনুগত্যে বৈদিক শিা গ্রহণ করেন এবং পরে ১৯৩৩ সালে এলহাবাদে তাঁর কাছে দীা প্রাপ্ত
হন।
১৯২২ সালেই শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত
সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল প্রভুপাদকে ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞান প্রচার করতে
নির্দেশ দেন। পরবর্তীকালে শ্রীল প্রভুপাদ ভগবদ্গীতার ভাষ্য লিখে গৌড়ীয় মঠের
প্রচারের কাজে সহায়তা করেছিলেন।১৯৪৪ সালে তিনি এককভাবে একটি ইংরেজী পাকি পত্রিকা
প্রকাশ করতে শুরু করেন। এমনকি তিনি নিজহাতে পত্রিকাটি বিতরণও করতেন।পত্রিকাটি এখনও
সারা পৃথিবীতে তাঁর শিষ্যবৃন্দ কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের দার্শনিক
জ্ঞান ও ভক্তির উৎকর্ষতার স্বীকৃতিরূপে ’গৌড়ীয়
বৈষ্ণব সমাজ’
তাঁকে ”ভক্তিবেদান্ত”
উপাধিতে ভূষিত করেন।১৯৫০ সালে তাঁর ৫৪ বছর বয়সে শ্রীল প্রভুপাদ
সংসার জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করের চার বছর পর বানপ্রস্থাশ্রম গ্রহণ করেন এবং
শাস্ত্র অধ্যয়ন, প্রচার ও গ্রন্থরচনার কাজে মনোনিবেশ করেন।তিনি
বৃন্দাবনে শ্রীশ্রী রাধা-দামোদর মন্দিরে বসবাস করতে থাকেন এবং অতি সাধারণভাবে
জীবনযাপন করতে শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।শ্রীশ্রীরাধা-দামোদর
মন্দিরেই শ্রীল প্রভুপাদের শ্রেষ্ঠ অবদানের সুত্রপাত হয়।এখানে বসেই তিনি শ্রীমদ্ভাগবতের
ভাষ্য ও তাৎপর্যসহ আঠার হাজার শ্লোকের অনুবাদ করেন এবং ”অন্য
লোকে সুগম যাত্রা”
নামক গ্রন্থটি রচনা করেন।
১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ
কপর্দক-হীন অবস্থায় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে পৌঁছান।প্রায় এক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম
করার পর তিনি ১৯৬৬ সালের জুলাই মসে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবণামৃত
সংঘ।তাঁর সযতœ নির্দেশনায় এক দশকের
মধ্যে গড়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী শতাধিক আশ্রম,বিদ্যালয়,মন্দির ও পল্লী-আশ্রম।
১৯৭৪ সালে শ্রীল প্রভুপাদ পশ্চিম
ভার্জিনিয়ার পার্বত্য-ভূমিতে গড়ে তোলেন নব বৃন্দাবন, যা হল বৈদিক সমাজের প্রতীক।এই সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর শিষ্যবৃন্দ
পরবর্তীকালে ইউরোপ এবং আমেরিকায় আরও অনেক পল্লী-আশ্রম গড়ে তোলেন।
শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য অবদান হলো
তাঁর গ্রন্থাবলী। তাঁর রচনাশৈলী গাম্ভীর্যপূর্ণ ও প্রাঞ্জল এবং
শাস্ত্রানুমোদিত।সেই কারণে বিদগ্ধ সমাজে তাঁর রচনাবলী অতীব সমাদৃত এবং বহু শিা-প্রতিষ্ঠানে
আজ সেইগুলি পাঠ্যরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে বৈদিক দর্শনের এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ
করছেন।তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গ্রন্থ-প্রকাশনী সংস্থা ’ভক্তিবেদান্ত
বুক ট্রাষ্ট’। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের সপ্তদশ খণ্ডের
তাংপর্যসহ ইংরাজী অনুবাদ আঠার মাসে সম্পূর্ণ করেছিলেন।
১৯৭২ সালে আমেরিকার ডালাসে গুরুকুল
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৈদিক শিা
-ব্যবস্থার প্রচলন করেন।১৯৭২ সালে মাত্র তিনজন ছাত্র নিয়ে এই গুরুকুলের সুত্রপাত
হয়।এবং আজ সারা পৃথিবীর ১৫টি গুরুকুল বিদ্যালয়ে ছাত্রের সংখ্যা প্রায় পনের শ’।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শ্রীধাম
মায়াপুরে শ্রীল প্রভুপাদ সংস্থার মূল কেন্দ্রটি স্থাপন করেন ১৯৭২ সালে।এইখানে
বৈদিক শিা ও সংস্কতি চর্চার জন্য একটি বর্ণাশ্রম মহাবিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা ও
তিনি দিয়ে গেছেন।শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশে বৈদিক ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত এইরকম
আর একটি আশ্রম গড়ে উঠেছে বৃন্দাবনের শ্রীশ্রীকৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে,
যেখানে আজ দেশদেশান্তর থেকে আগত বহু পরমার্থী বৈদিক সংস্কৃতির
অনুশীলন করছেন।
১৯৭৭ সালে এই ধরাধাম থেকে অপ্রকট
হওয়ার পূর্বে শ্রীল প্রভুপাদ সমগ্র জগতের কাছে ভগবানের বাণী পৌঁছে দেবার জন্য তাঁর
বৃদ্ধাবস্থাতেও সমগ্র পৃথিবী চৌদ্দবার পরিক্রমা করেন।মানুষের মঙ্গলার্থে এই
প্রচারসূচীর পূর্ণতা সাধন করেও তিনি বৈদিক দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি সমন্বিত বহু গ্রন্থাবলী
রচনা করে গেছেন, যার মাধ্যমে এই জগতের মানুষ পূর্ণ আনন্দময়
এক দিব্য জগতের সন্ধান লাভ করবে।