Header Ads Widget

দেবর্ষি নারদের অভিমান চুর্ণ


দেবর্ষি নারদ ছিলেন ব্রক্ষার পুত্র, ও তিনি একজন বড় তপস্বী এবং ভগবান নারায়ণের পরম ভক্ত । স্বীয় তপঃ প্রভাবে তিনি ত্রিভুবনে বিচরণ করতে পারতেন, নারায়ণের পরম ভক্ত হওয়াই, নিত্য বৈকুন্ঠে গিয়ে হরি গুণগান করে ভগবান নারায়ণকে মুগ্ধ করতেন। 

একদিন দেবর্ষি নারদের মনে সংশয় জন্মাল, যে সংসারী মানুষেরা এতো সুখ সাছন্ধে বসবাস করার পরেও কেন কেহ কেহ নারায়ণের নাম লয়? আবার কেহ সারাদিন একবারও শ্রীনারায়ণকে স্মরণ করে না? তাই তিনি তাঁর মনের কথা ব্যক্ত করলেন, ভগবান শ্রীনারায়ণকে বললেন এবং এই ব্যপারে জানতে চাইলেন। 

নারায়ণ দেবর্ষি নারদকে বললেন, সময় এলে তোমার মনের সংশয় কেঁটে যাবে। তাই দেবর্ষি নারদের শংসয় দুর করার জন্য নারায়ণ এক ছলনার আশ্রয় নিলেন, ভগবান একদিন নারদকে বললেন দেবর্ষি চলো আমরা দুজনে কোথাও বেড়িয়ে আসি। নারদ বললেন চলুন প্রভু!দুজনে বের হলেন, কিছুদুর পথ চলার পর দুজনে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করতে বসলেন, 

কিছুক্ষণ পর ভগবান বললেন দেবর্ষি আমি বড় পিপাসার্ত আমার জন্য একটু জল নিয়ে আসতো। দেবর্ষি ভগবানের জন্য জলের খোঁজে বের হলেন। কিছুদুর গিয়ে এক সুন্দর মনোরম সরোবরে এসে পৌছিলেন, সেখান থেকে জল আনতে গিয়ে এক অতিব পরমা সুন্দরী রমনী দেখলেন। দেবর্ষি নারদকে দেখেই রমনী বললেন আসুন আমি তো আপনার জন্যই বহুক্ষণ অপেক্ষা করছি। 

নারদমুনি জানতে চাইলেন কেন? উত্তরে রমনী বললেন,আমি বহুদিন শিবের তপস্যা করেছি আপনাকে পতিরুপে পাবার জন্য। তাই দেবাদিদেব শঙ্কর আমার তপস্যা সন্তষ্ট হয়ে আমাকে বরদান করেছেন। তাই তিনি এখানে পাঠিয়েছেন। এই বলে রমনী দেবর্ষি নারদকে জড়িয়ে ধরলেন, সেই মায়াকন্যার স্পর্শে দেবর্ষি নারদ পুর্ব স্মৃতি লোপ পেল, তখন তিনিও সুন্দরী রমনীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। দেবর্ষি ভাবলেন বিবাহ তো হলো এখন থাকা যায় কোথায়, তখন দেবর্ষি ও তার স্ত্রী দুজনে মিলে এক গ্রামের এক পাশে একটি ঘর তৈরী করে তাতে মহাসুখে সংসার করতে লাগলেন। 

কিছুদিন পরে এক এক করে দুটি সন্তান লাভ করলেন। নারদ তখন স্ত্রী পুত্র নিয়ে সুখের সংসার নিয়ে মেতে রইলেন। এদিকে দেবর্ষি নারদ সেই মায়াকন্যার সংস্পর্শে থেকে ভগবানের কথা একেবারে ভুলেই গেলেন। এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল। একদিন হঠাৎ সেই গ্রামে কলেরা মহামারী দেখা দিল, গ্রামের বহু লোক কলেরায় মারা যেতে লাগলো। 

নারদ তাঁর স্ত্রীকে বললেন এখানে থাকলে সন্তানদের নিয়ে বাঁচা মুশকিল হবে, তার চেয়ে চলো আমরা অন্য কোথাও চলে যায়। এসব চিন্তা করে নারদ তখন স্ত্রীপুত্রদের ও সংসারের জিনিসপত্র নিয়ে বের হলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর পথে একটি নদী পড়লো দেবর্ষি নারদ স্ত্রী পুত্র জিনিস পত্র নিয়ে একটি নৌকায় উঠলেন। নৌকাটি নদীর মঝামাঝি যেতেই ভীষণ ঝড় উঠলো ঝড়ের দাপটে নৌকা টলমল করতে লাগলো দেবর্ষি নারদ ভাবতে লাগলেন আর বুঝি রক্ষা হল না। নৌকা ডুবো ডুবো এমন সময় তাঁর এক ছেলে জলে পড়ে যায়, দেবর্ষি হায় হায় করে কেঁদে উঠলেন। এদিকে ঝড়ের বেগ ক্রমসো বাড়তে লাগলো, তখন অন্য পুত্রটিও জলে পরে যায়। সন্তানকে উদ্ধার করতে নারদের স্ত্রী ও জলে ঝাপ দিলেন।এদিকে ঝড়ের দাপটে নৌকাও উল্টে গেল। দেবর্ষি স্ত্রীপুত্রদের বাঁচাতে জলে ঝাপ দিলেন কিন্তুু স্ত্রী, পুত্র স্রোতের টানে তলিয়ে গেল দেবর্ষি তাদের আর নাগাল পেলেন না।

দেবর্ষি জলের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন পরেরদিন যখন নারদের জ্ঞান ফিরল দেখলেন নদীর তীরে এক গাছের তলায় শুয়ে আছেন। তখন দেবর্ষি ভাবতে লাগলেন একি আমি এখানে কেন? কেনইবা এখানে এলাম? অনেক্ষণ ভাবতে ভাবতে দেবর্ষির পুর্ব স্মৃতি ফিরে এলো। মনে পরলো আমিতো ভগবানের সাথে বেড়াতে এসেছিলাম এবং পিপাসার্ত ভগবানের জন্য জল আনতে গিয়েছিলাম। একি ঘটলো আর সেই স্ত্রী পুত্রই বা কোথায় গেল আর সেই মায়ানদী? তবে সবই কি ভগবানের মায়া?

এবার দেবর্ষি চললেন বৈকুন্ঠে ভগবানের চরণ বন্ধনা করতে। দেবর্ষিকে দেখেই ভগবান বললেন এসো এসো দেবর্ষি তা তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? তোমায় তো বহুদিন দেখি নাই। দেবর্ষি ভগবানের চরণে পড়ে কেঁদে কেঁদে বললেন, প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন,আপনার মায়া প্রভু আপনিই ভাল জানেন। শুধু আশির্বাদ করুন আর যেনো আপনার মায়ায় কোনদিন আবদ্ধ না হই। 

ভগবান বললেন দেখলে তো দেবর্ষি সংসার করতে গেলে সংসারী লোকের কেমন অবস্থা হয়। তাঁরা আমারি দেওয়া স্ত্রী, পুত্র সংসার সবকিছু পেয়ে আমাকেই কি করে ভুলে যায়। তাই হে-সংসারী জীব আমরাও সেই মায়ার নদীতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। 

দিন শেষে একবারও ভগবানের কথা মনে করিনা,তাই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি হে-ভগবান আপনার চরণে যেন সদা মতি থাকে।তুমি কৃপা করে আমায় অনন্যা ভক্তি দাও।